নাক ডাকার কারণ ও সমাধান

নাক ডাকা এমন একটি সমস্যা আছে এটি শুধু নিজের জন্য বিবৃতকর নয়,আশেপাশের মানুষও এর ফলে বিড়ম্বনায় পড়ে।এর আছে নানা স্বাস্থ্য ঝুকিও। নারী-পুরুষ সব বয়সের মানুষের নাক ডাকার সমস্যায় পড়তে পারে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ও নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে। শীতকালে এই সমস্যাটি বাড়তে পারে।

নাক ডাকার কারণ ও সমাধান :

ডক্টর হাসানুল হক বলেন, আপনার থেকে ফুসফুস পর্যন্ত যে জায়গাটা আছে, সেখানে বাতাস প্রবাহ হয়। যেকোনো কারণে যদি শ্বাসের রাস্তায় বাতাস প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে একজন ব্যক্তির ঘুমের ভেতর নাক ডাকা শুরু হয়। বিভিন্ন কারণে নাক ডাকা সমস্যা হতে পারে। যেমন :

১.স্থূলতা, অত্যাধিক ওজন হলে অনেকে না ডাকে।

২.নাকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন- নাকের হাড় যদি কারো বাঁকা থাকে, নাকের ভেতর যদি পলিপ থাকে, নাকে মাংসের বৃদ্ধি  থাকলে নাক ডাকতে পারে।

৩.অত্যাধিক চর্বি জমার কারণে যদি মুখের ভেতর জায়গা কমে যায়।

৪.শ্বাসনালীতে বিভিন্ন ধরনের টিউমার হয়। যদি কারো সেই ধরনের টিউমার থাকে তাহলে নাক ডাকতে পারে।

৫.জিহ্বার পেছনের অংশে যদি টিউমার থাকে তাহলে নাক ডাকতে পারে।

৬.কারো যদি অনেক বড় টনসিল থাকে।

৭.বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আরেক ধরনের টনসিল আছে, তাকে বলে এডিনয়েড। সেই এডিনয়েড যদি বড় থাকে সেক্ষেত্রে বাচ্চারাও নাক ডাকতে পারে।

নাক ডাকলে যা যা ঘটে

যিনি ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন তিনি সাধারণত সমস্যাটি বুঝতে পারেন না। তার আশেপাশে থাকা ব্যক্তিরা বিষয়টি প্রথম বুঝতে পারে। বিভিন্ন লক্ষণ রয়েছে, যেমন –

১.ঘুমের মধ্যে হঠাৎ শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে জোরে জোরে শত করে নাক ডাকতে থাকবে।

২.ঘুমের মধ্যে গোঙ্গানির মত শব্দ হবে।

৩.নাক ডাকার সমস্যার কারণে অসম্পূর্ণ ঘুম হবে।

৪.দিনের বেলায় ঘুম ঘুম, ঝিমুনি ভাব থাকবে।

৫.অবসাদগ্রস্ততা ও দুর্বলতা দেখা দিবে।

৬.ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাবে।

৭.যৌন ক্ষমতা হ্রাস পাবে।

৮.মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে।

৯.নাক ডাকেন যারা তারা সাধারণত মুখ হা করে ঘুমায়।মুখের ভেতর শুকনো ভাব হবে ঘুমের মধ্যে। বারবার ঘুম ভাঙবে, উঠে পানি খেতে হবে।

১০.নাক ডাকার কারণে ঘুমে ব্যাঘাত হয়, এতে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। ফলে অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দেবে।

নাক ডাকার ঝুকি

ডক্টর হাসানুল হক বলেন, মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা আছে।অনেকে বলেন নাক ডাকা মানে সুখ নিদ্রা। এটি সম্পূর্ণ ভুল। নাক ডাকা একটি রোগ এবং মারাত্মক রোগের উপসর্গ। শরীরে যে রোগ বাসা বাধছে নাক ডাকা তার একটা লক্ষণ। নাক ডাকার ফলে শরীর বিভিন্ন ঝুঁকিতে পড়তে পারে। যেমন-

১.নাক ডাকার সমস্যার কারণে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়, এতে করে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এমনকি ঘুমের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক ও হতে পারে যেকোনো সময়।

২.মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমার কারণে ব্রেন স্ট্রোক হতে পারে।

৩.ক্লান্তি, বিরক্তি ও মাথা ব্যাথা হবে।

৪.অল্পতেই রেগে যেতে পারে। মুড সুইং হবে।

নাক ডাকার সময় জাগিয়ে দেওয়া কি ঠিক?

ঘুমের মধ্যে কিছু সময়ের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসবদ্ধ হয়ে যাওয়াকেই বলে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া।যাদের এই সমস্যা আছে তারাই ঘুমের মধ্যে নাক ডাকে। আবার নাক ডাকার সমস্যা যাদের আছে তাদেরই স্লিপ অ্যাপনিয়া হয়।একে অপরের পরিপূরক।

অনেক সময় না থাকার মাঝখানে অনেকে স্লিপ অ্যাপনিয়া হয়। ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ডের জন্য শ্বাস প্রশ্বাস একেবারে বদ্ধ হয়ে যায়। ১০ থেকে ১২ বার অ্যাপনিক কন্ডিশনে চলে যেতে পারেন অনেকে। এ অবস্থায় ঐ ব্যক্তিকে ডেকে দিলে শরীরে কোন খারাপ প্রভাব পড়বে না জানান ডাক্তার হাসানুল হক। বরং ডেকে দিলে নাক ডাকার কারণে যে  অ্যাপনিয়া ছিল সেটাই ঠিক হয়ে যাবে। তিনি আবারও শেষ নেওয়া শুরু করবে।

নাক ডাকার চিকিৎসা ও প্রতিরোধে করণীয়

যারা অত্যাধিক নাক ডাকেন তাদের অবশ্যই একজন নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। নাক, গলা ভালো করে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ বের করতে হবে। প্রয়োজনে এমআরআই, সিটি স্ক্যান সহ বিভিন্নভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যা সনাক্ত করতে হবে।

কোন লেভেলের সমস্যাটা হচ্ছে নাকের সামনের দিকের অংশের কারণে হচ্ছে কিনা পেছনের দিকের অংশের কারণে  হচ্ছে তা নির্ধারণ করতে হবে। প্রয়োজনে পলি মনোগ্রাফি পরীক্ষার মাধ্যমে  অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া সনাক্ত করতে হবে।

এছাড়া না ঠিক থাকলেও শারীরিক অবস্থা কি আছে গলা ও নাকের আশেপাশে চর্বি জমে আছে কিনা অতিরিক্ত ওজন আছে কিনা সেটি দেখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসার নিতে হবে।

যারা নিয়মিত অ্যালকোহল ও ধূমপান করেন তাদেরও নাক ডাকার সমস্যা হতে পারে। তাদের এসব এড়িয়ে চলতে হবে। নাকের হাড় বাঁকা, অলির পার্টি মারার কারণে না থাকলে সেই অনুযায়ী সমস্যা চিহ্নিত করে চিকিৎসা নিতে হবে।

নাকের স্প্রে,বিভিন্ন ওষুধ ও ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটির মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। আর না কমলে পরিস্থিতি অনুযায়ী সার্জারি করার কথা বলেন ওই চিকিৎসক।

নাক ডাকা প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে, নাক ডাকা একটি রোগ যেটি বুঝতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, ব্যায়াম, শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বাড়াতে হবে, ধূমপান, অ্যালকোহল বাদ দিতে হবে। নাকের পলিপ,সাইনোসাইটিসের সমস্যা থাকলে দ্রুত চিকিৎসা করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *