থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়

থাইরয়েড একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি,যা শরীরের মেটাবলিজম,হরমোন নিয়ন্ত্রণ, এবং শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় ভূমিকা রাখে। থাইরয়েডের গ্রন্থি ঠিকমতো কাজ না করলে হাইপারথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজম তখন হয়, যখন থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন করে। এটি ওজন হ্রাস,উদ্বেগ,হৃদ স্পন্দন বৃদ্ধি,অতিরিক্ত খামের মত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

এ ধরনের সমস্যাকে দীর্ঘ মেয়াদে এড়াতে এবং থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণের রাখতে কিছু সঠিক উপায় অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসার পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাস,নিয়মিত ব্যায়াম এবং প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হতে পারে। নিচে আমরা থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণের রাখার উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

থাইরয়েড কমানোর জন্য সঠিক ডায়েট

সঠিক খাদ্যভ্যাস থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনার খাবারে এমন উপাদান রাখতে হবে যা হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

১.আয়োডিন নিয়ন্ত্রণ করা

থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনের জন্য আয়োডিন অপরিহার্য। তবে অতিরিক্ত আয়োডিন গ্রহণ  হাইপারথাইরয়েডিজমের সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

  • আয়োডিনযুক্ত লবণ এবং সামুদ্রিক খাবার যেমন -চিংড়ি, কাঁকড়া এড়িয়ে চলুন।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে আয়োডিন গ্রহণ করুন।

২.সয়া পণ্য এড়িয়ে চলুন

  • সয়া পণ্য থাইরয়েড হরমোন শোষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
  • সয়া দুধ, টফু এবং সয়া সস খাওয়া কমান।
  • থাইরয়েড ওষুধ গ্রহণের আগে  বা পরে সয়া পণ্য গ্রহন না করাই ভালো।

৩.অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি খাবার খাওয়া শুরু করুন

  • শরীরের প্রদাহ কমাতে অ্যান্টি- ইনফ্লেমেটরি খাবার অত্যন্ত কার্যকর।
  • পালং শাক, ব্রকলি, ব্লুবেরি এবং আপেলের মতো ফল ও শাকসবজি খান।
  • বাদাম, তিসি বীজ এবং চিয়া সিডে থাকা ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ কমায়।

৪.গ্লুটেনমুক্ত ডায়েট চেষ্টা করুন

  • গ্লুটেন সংবেদনশীলতা থাইরয়েডের সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
  • গ্লুটেনমুক্ত শস্য যেমন চাল,জোয়ার এবং ভুট্টা বেছে নিন।
  • গ্লুটেনযুক্ত খাবার যেমন গম এবং বার্লি এড়িয়ে চলুন।

নিয়মিত ব্যায়াম

নিয়মিত ব্যায়াম থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখে।

১.কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম

কার্ডিওভাসকিলার ব্যায়াম যেমন- হাটা, সাইকেল চালানো অথবা দৌড়ানো থাইরয়েড সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

এটি শরীরের মেটাবলিজমকে উন্নত করে এবং উদ্বেগ কমায়।

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন।

২.যোগব্যায়াম

যোগ ব্যায়াম এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন শরীরকে স্বস্তি দেয় এবং থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

  • সিংহাসন এবং সুভক্তাসন থাইরয়েড গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে।
  • উজ্জয়ী প্রণায়াম হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে।

৩.স্ট্রেন্থ ট্রেনিং

শক্তি বৃদ্ধির জন্য হালকা ওজনের ব্যায়াম করুন। এটি হার ও পেশি কে শক্তিশালী করে এবং শরীরকে আরও ফিট রাখে।

মানসিক চাপ কমানোর কৌশল

মানসিক চাপ থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। সঠিক ম্যানেজমেন্ট থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়ক।

১.মেডিটেশন করুন

প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট মেডিটেশন করলে মানসিক চাপ কমে এবং শরীরের হরমোন ভারসাম্য বজায় থাকে।

২.পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন

ঘুমের অভাব  হরমোনের ভারসাম্য  নষ্ট করতে পারে। প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘণ্টা ভালো ঘুম নিশ্চিত করুন।

৩.পছন্দের কাজ করুন

গান শোনা,বই পড়া বা প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানোর মতো কাজ মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে।

প্রাকৃতিক উপায়ে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ

প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার থাইরয়েড কমাতে অত্যন্ত  কার্যকর।

১.তুলসী পাতা

তুলসী পাতা থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। সকালে তুলসী পাতা চিপিয়ে খান অথবা তুলসী  পাতা চা পান করুন।

২.মেথি বীজ

  • মেধাবীজ থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে।
  • মেথি বীজ সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খান ।

৩.নারকেল তেল

নারকেল তেল মেটাবলিজম উন্নত  করে এবং থাইরয়েড হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখে। রান্নায় নারকেল তেল ব্যবহার করুন অথবা দিনে ১-২ চামচ খান।

৪.এলাচ

  • এলাচ শরীর থেকে টক্সিন বের করে এবং থাইরয়েড হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • এনার চা পান করুন বা খাবারের ব্যবহার করুন।

থাইরয়েড কমানোর সাধারণ টিপস

১.প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

২.সুষম খাদ্য গ্রহণ নিশ্চিত করুন।

৩.অতিরিক্ত প্রসেসড খাবার এবং চিনি যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

৪.ওষুধ সময়মতো এবং সঠিক মাত্রায় গ্রহণ করুন।

৫.নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন

থাইরয়েড সমস্যা যদি নিয়মিত অনুভূত হয় বা এর লক্ষণগুলি আরো খারাপ হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। লক্ষণ গুলির মধ্যে অতিরিক্ত ক্লান্তি, হৃদস্পন্দন, ঘুমের সমস্যা এবং ওজনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন অন্তর্ভুক্ত। চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে  থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করবেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নির্ধারণ করবেন।

উপসংহার

থাইরয়েড সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন মনে হতে পারে, তবে যদি সঠিক খাদ্যভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক চাপ কমানোর পদ্ধতি অনুসরণ করলে এটি অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।প্রাকৃতিক উপায় গুলো যেমন তুলসী পাতা, মেথি বীজ এবং নারকেল তেল ব্যবহার করে থাইরয়েড হরমোন নিয়ন্ত্রণের রাখা সম্ভব।

যদিও এই পদ্ধতি গুলি কার্যকর তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। থাইরয়েড সমস্যা দীর্ঘদিন অবহেলা করলে তা গুরুতর  জটিলতায় পরিণত হতে পারে। স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং থাইরয়েড সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করুন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *