সুন্দর আর স্বাস্থ্যাোজ্জ্বল আমরা প্রত্যেকেই চাই। চুলের পরিচর্যা কিভাবে করতে হবে সেই বিষয়ে আমাদের সবার ভীষণ আগ্রহ। তবে চলে যত্ন করতে গিয়ে কোন ভুল সেই বিষয়ে আমরা অনেকেই জানিনা। আসলে চুলের যত্নে আমরা নিজের অজান্তে কিছু ভুল করে ফেলি, যা দিনশেষে চুলের আরো ক্ষতি করে। আসুন জেনে নেই কোন ভুলগুলো আমাদের চুলের ক্ষতি করছে দিন দিন।
১.প্রতিদিন হেয়ার অয়েল ব্যবহার করা :
আগেকার দিনে আমাদের মা খালারা প্রতিদিন নিয়ম করে চুলে তেল দিতেন। তাদের ধারণাই ছিল রোজ তেল ব্যবহার করলে চুল থাকবে ঘন, কালো ও লম্বা। তবে হেয়ার এক্সপার্টদের মতে রোজ রোজ তুলে তেল লাগানোর প্রয়োজন নেই। কারণ প্রতিদিন চুলে তেল ব্যবহার করলে মাথার ত্বক অতিরিক্ত অয়েলি হয়ে যায়। যা আমাদের চুলের জন্য মোটেই ভালো না। তাই প্রতিদিন তেল না দিলেও চলবে। চুল স্বাস্থ্যজ্জল ও ঝলমলে রাখার জন্য সপ্তাহে একদিন চুলের গোড়া এবং পুরো চুলের তেল লাগাতেই হবে। তবে চুল যদি শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়ে থাকে সেদিকে দুই দিন পর পর তেল মেসেজ করা ভালো।
২.সঠিক হেয়ার ওয়াশ রুটিন মেনটেন না করা :
অনেকে আছে প্রতিদিনই চলে শ্যাম্পু করে। আবার অনেকে হয়তো সপ্তাহে এক দুই বার পরিষ্কার করছেন। আপনার চুলের জন্য কোন হেয়ার অয়েল সঠিক তা নির্ভর করে আপনার মাথার ত্বক ও চুলের ধরনের উপর। আপনার মাথায় ত্বক যদি তৈলাক্ত হয়ে থাকে, তাহলে ফ্রিকোয়েন্টলি হেয়ার ওয়াশ করা প্রয়োজন। কিন্তু যদি আপনার এই সমস্যা না হয়ে থাকে, তাহলে বারবার সে ভুল ব্যবহারে আপনার মাথার ত্বক হতে পারে রুক্ষ। তাই নিজের স্ক্যাল্প ও চুলের ধরন বুঝে শ্যাম্পু বেছে নেন।
৩.অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করা :
চুলের জন্য সঠিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মনে রাখতে হবে কখনোই বেশি তাপমাত্রার পানিতে হেয়ার ওয়াশ করা যাবে না। অতিরিক্ত গরম পানির মাথার ত্বকের অয়েল গ্ল্যান্ডগুলো অ্যাকটিভ করে। যার ফলে চুল পরিষ্কার করার পরও আঠালো ভাব তৈরি হয়। চুলের জন্য সবচেয়ে ভালো হলো স্বাভাবিক তাপমাত্রার ঠান্ডা পানি। যদি গরম পানি ব্যবহার করতে চান তাহলে ব্যবহার করুন কুসুম গরম পানি।
৪.শ্যাম্পুর ভুল ব্যবহার :
চুলের জন্য সঠিক শ্যাম্পু বাছাইয়ের পাশাপাশি সেটা সঠিক ব্যবহারের দিকও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। ঠিক কতটা পরিমান শ্যাম্পু ব্যবহার করা প্রয়োজন তা মাথায় রাখুন। চেষ্টা করুন সরাসরি শ্যাম্পু ব্যবহার না করে পানির সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে। শ্যাম্পু নিয়ে আলতোভাবে মাথার তালুতে ম্যাসাজ করুন।ভেজা অবস্থায় চুলের গোড়া নরম থাকে বলে শ্যাম্পু ব্যবহারের সময় বেশি জোরে মেসেজ করলে চুল পড়ে যেতে পারে।
৫.চুলকে ময়েশ্চারাইজ না করা :
আমাদের চুল খুব দ্রুত আর্দ্রতা হারায়। তাই প্রতিবার শ্যাম্পু ব্যবহারের পর কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন এবং প্রতি সপ্তাহে একবার নিজের পছন্দের হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। তাইলে চুলের ধরন অনুযায়ী ঘরেই তৈরি করতে পারেন প্রাকৃতিক উপাদানের ময়েশ্চারাইজার। সমপরিমাণ পানি ও ভেজিটেবল গ্লিসারিন একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি গোসলের আগে অথবা পরে চুলে স্প্রে করুন। এতে চুল হবে সিল্কি ও সফট। তাইলে মিশ্রণটি কিন্তু শ্যাম্পুর সঙ্গে মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।
৬.সঠিকভাবে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করা :
চুল সব সময় সাধারণভাবেই শুকিয়ে নেওয়া ভালো। তবে ব্যস্ততার কারণে অনেক সময় হেয়ার ড্রায়ারের ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে চুল শুকাতে। তবে অনেকেই জানেন না যে অতিরিক্ত ভেজা চুলে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করলে ড্রায়ারের হিট চুল কে ড্যামেজ করে দিতে পারে। তাই এক্ষেত্রে তাপমাত্রা কমিয়ে নিন এবং সেই সাথে একটি ভাল হিট প্রোটেক্টিং স্প্রে বা জেল ব্যবহার করুন। হেয়ার ড্রায়ার কখনোই মাথার তালুতে ব্যবহার করবেন না। সব সময় কিছুটা দূর থেকে গুড়িয়ে গুড়িয়ে চুল শুকান।
৭.মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার না করা :
চুলের যত্নে ভালো চিরুনি বাছাইয়ের সাথে সাথে চুল সঠিকভাবে আচড়ানো ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চুল জোরে ও বার বার আচড়ানো মোটেই ঠিক নয়। জট ছাড়াতে বা ভেজা চুলে মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করা উচিত সবসময়। এতে করে চুল কম ভাঙ্গে এবং সহজে গোছানো যায়। অন্যদিকে চিকন দাঁতের চিরুনি চুলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
৮.চুল খুলে ঘুমানো :
চুল খুলে ঘুমিয়ে যাওয়ার অভ্যাস কিন্তু অনেকেরই থাকে। এই অভ্যাসটি আমাদের চুলের জন্য মোটেই ভালো নয়।চুল খুলে ঘুমালে চুলে জট বেধে যায় এবং চুলের ক্ষতি হয়। তাই যাদের চুল বড় তাদের সব সময় চুল বেঁধে ঘুমানো উচিত। আবার যাদের চুল ছোট তারা মাথায় একটি কাপড় পেচিয়ে নিতে পারেন ঘুমানোর সময়।
৯.ভেজা চুলে ঘুমানো :
অনেকেরই চুল ভেজা অবস্থাতে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে এই অভ্যাসটি চুলের মারাত্মক ক্ষতি করে। চুল ভেজা অবস্থায় শুয়ে পড়লে চুল ভালো করে শুকাতে পারে না। যার ফলে চুলের গোড়া নরম হয়ে চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে। এছাড়া চুল পড়ে যাওয়ার প্রধান একটি কারণ হলো চুল সঠিকভাবে না শুকানো। তাই যদি চুলের ক্ষতি এড়াতে চান তাহলে চুল সঠিকভাবে শুকানো হওয়ার পরে তার বাধা উচিৎ এবং ঘুমানো উচিত।
১০.ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যভাস:
আমরা যা খাই তা আমাদের ত্বক ও চুলের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। কিছু কিছু খাবার যেমন আমাদের চুল সুন্দর ও উজ্জ্বল করে। ঠিক তেমনি কিছু খাবার আবার চুলের জন্য হতে পারে ক্ষতিকর। যেমন অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার ইনফ্ল্যামেশন সৃষ্টি করে এবং চুলের ফলিকলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাই অবশ্যই খাবার তালিকা কি রাখা হচ্ছে তা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
এই চলো চুলের যত্নে করা কিছু সাধারন ভুল নিয়ে যা আমাদের এড়িয়ে চলা উচিত। পরিশেষে বলতে চাই চুলের যত্নে শুধুমাত্র সঠিক প্রোডাক্ট বাছাই করার কোন বিকল্প নেই।