আলোর সঠিক ব্যবহার :
চোখ যে কোন আলোই কিছুক্ষণের মধ্যে গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু চোখ ভালো রাখার জন্য কম আলো বা তীব্র আলোতে লেখাপড়া ও অন্যান্য কাজকর্ম করা উচিত নয়। দিনের বেলা সূর্যের আলো সরাসরি চোখে না পড়াই ভালো। রাতের বেলা টিউবলাইট এর আলো চোখের জন্য খুব আরামদায়ক।টেবিল ল্যাম্পের সাথে লেখাপড়ার সময় ল্যাম্পটি দেয়ালের দিকে রেখে প্রতিফলিত আলোতে পড়া ভালো।
ইলেকট্রনিক পর্দা
টিভি দেখার সময় টিভির পেছনের দিকে দেয়াল একটি টিউবলাইট পাশের যোগ্য ৪০ বা ৬০ ওয়াটের বাল্ব চালিয়ে টিভি দেখা ভালো। সম্পূর্ণ অন্ধকার ঘরে টিভি দেখা ঠিক নয়। একই কথা মুঠো ফোনের বেলায়ও।দিনের বেলা যে দরজা বা জানালার আলো টিভির পর্দায় প্রতিফলিত হয়, সেসব বন্ধ রাখায় ভালো। দশ ফুট দূর থেকে টিভি দেখা উচিত। তবে ছয় ফুটের কম দূরত্ব থেকে টিভি দেখা চোখের জন্য ক্ষতিকর। বড় ছোট বিভিন্ন আকারের টিভি দেখার ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন দূরত্ব বজায় রাখতে হয়। মুঠোফোন ও চোখের খুব কাছে নিয়ে দেখবেন না। টিভি ও মুঠোফোনের রং, উজ্জ্বলতা ও কনট্রাস্ট ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চোখের জন্য সহনীয় মাত্রাগুলো নির্ণয় করে এসব নিয়ন্ত্রণ করুন। একটানা অনেকক্ষণ মুঠোফোন বা টিভি দেখা উচিত নয়।
প্রসাধনের ব্যবহার
যে কোন প্রসাধনে চোখের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত প্রসাদনী চোখে ব্যবহার করলে এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস, ব্লেফারাইটিস,স্টাই ইত্যাদি রোগ হওয়ার সংখ্যা বেশি থাকে। মাথায় খুশকি থাকলে সপ্তাহে দুবার খুশকিনাশক শ্যাম্পু ব্যবহার করে মাথা খুশকি মুক্ত রাখতে হবে। নইলে মাথার খুশকি থেকে চোখে আক্রান্ত হয়ে চোখে ব্লেফারাইটিস দেখা দিতে পারে।
ধুলো ময়লা ও দূষিত পরিবেশ
প্রতিদিন কাজের শেষে চোখ ঠান্ডা পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। সূর্যের অতি বেগুনি রশ্নি চোখের শত্রু। তাই সূর্যালোক থেকে দূরে থাকাই উত্তম। রোদে গেলে রোদ চশমা পড়া উচিত। যাদের এমনিতে চশমা পড়তে হয়, তাদের জন্য ফটোক্রোম্যাটিক লেন্স ব্যবহার আরামদায়ক।কনজাংটিভাইটিস, কনিয়াল আলসার, আইরাইটিসের রোগীদের জন্য এবং ছানি অপারেশনের পর কালো চশমা ব্যবহার করা জরুরী। চোখ ভালো রাখতে প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঠান্ডা ও পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখ ভালোভাবে ধুয়ে ঘুমানো উওম।
বিভিন্ন রোগের সময় চোখের যত্ন
শিশুদের হাম, জলবসন্ত, হুপিং কাশি, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগের বিশেষ যত্ন নেওয়া আবশ্যক। এসব রোগে ঠিকমতো চিকিৎসা না করালে চোখের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। দীর্ঘদিন ডায়বেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে চোখে ডাইবেটিস রেটিনোপেথি হতে পারে। এসব রোগে নিয়মিত সঠিক নিয়ে ডায়াবেটিস বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলে চোখ ভালো রাখা সম্ভব।
চশমার ব্যবহার
যাদের চোখে চশমা প্রয়োজন, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মত দৃষ্টি শক্তি পরীক্ষা করে চশমা পড়া উচিত। স্বাভাবিকভাবে ৪০ বছরের কাছাকাছি বয়স থেকে পড়াশোনা করতে ও কাছে জিনিস দেখতে অসুবিধা হয়। এ সময় অনেকে নিজের মন মত এটি রেডিমেট দৃষ্টিশক্তি চশমা ব্যবহার করেন যা চোখের জন্য ক্ষতিকর।অবশ্যই চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক দ্বারা চোখ পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় চশমা পড়তে হবে। আবার অনেকে মনে করে এ সময় চশমা ব্যবহার করলে সারা জীবন চশমা ব্যবহার করতে হবে। তাই অনেকেই ভুল ধারণায় চশমা ব্যবহার করতে চায় না। চশমা সব সময় পরিষ্কার রাখা উচিত। অস্বচ্ছ ও ফাটা লেন্স ব্যবহার করা উচিত নয়।
হঠাৎ চোখে কিছু পড়লে
মূলত ধূলিকণা, কীটপতঙ্গ, ছোট ইট পাথর বা কাঠের টুকরো থেকে শুরু করে ছোট খেলার বল -নানা কিছুই হঠাৎ চোখে পড়তে পারে।এসবের কারণে চোখে প্রথমে খচখচে,চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ে, চোখ জ্বালাপোড়া করে এবং চোখ বন্ধ রাখলে আরাম হয়, চোখ লাল হয়ে যায়।দ্রুত বের করে নেওয়া না হলে সে ময়লা কর্নিয়ার ঘষা লেগে চোখে ক্ষতি করতে পারে,ক্ষতির একপর্যায়ে চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিশেষ করে শিশুরা খুব ঘন ঘন চোখ কষাতে বা চুলকাতে থাকে এটি একেবারেই করা যাবে না। এমন সহজ কিছু পড়ে থাকলে কটনবাড বা তুলা একটু পেঁচিয়ে অন্যের সাহায্য দিয়ে আলতো করে বের করে আনার চেষ্টা করতে হবে।