আবহাওয়া পরিবর্তন হলেই শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। শীতের সময় শিশুদের অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। হুটহাট ঠান্ডা লেগে যায় জ্বর আসে। শীতের সময় আমরা শিশুদের পানি ধরতে না, বাইরে খেলতে যেতে দেই না, এমনকি খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে অনেক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকি। শিশুদের সুস্থ থাকার জন্য কি নিষেধাগুলো প্রয়োজন আছে কি?নাকি শীতকালেও সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে শিশুকে সুস্থ রাখা যায়? শীতের শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন জেনে নিন।
কিভাবে শীতের শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করবেন?
১.নিয়মিত হাত ধোয়া
শীতের সময়ে আমরা শুরুতেই শিশুর সুস্থতা নিয়ে অস্থির হয়ে যাই।পানি ধরতে দেই না। শুধুমাত্র গোসলের সময় অল্প গরম পানি দিয়ে গোসল শেষ করে ফেলি। আমরা ভাবি যেহেতু শরীর বা হাত গামছে না তাই সেটা এত পানি দরকার পড়ে না। বেশি পানি ধরলে ঠান্ডা লাগবে। সচেতন বাবা-মা হিসেবে আপনি এটি ভাবতেই পারেন। কিন্তু শিশুকে সুস্থ রাখতে হলে তাকে অবশ্যই অন্যান্য সময়ের মতো নিয়মিত হাত ধোয়াতে হবে। কারণ এ সময় বাতাসে ধূলিকণা বেশি থাকে। নিয়মিত হাত না ধরলে খাবার বা খেলার সঙ্গে সেগুলো শরীরে প্রবেশের সম্ভাবনা বেশি থাকে। এক্ষেত্রে ঠান্ডা পানির পরিবর্তে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা যায়। শিশুদের মাঝে হাত ধরে অভ্যাস গড়ে তুলুন। বাচ্চার মাঝে হাত ধর অভ্যাস করে তুললে, তার থেকে ঠান্ডা, ফ্লু,,নিউমোনিয়ার মত সমস্যা দূরে থাকবে।
২.নিয়মিত গোসল করানো
শীতের ঠান্ডা আবহাওয়া শিশুদের গোসল করাতে চান না অনেকেই। কিন্তু গোসল না করানো শিশুদের জন্য মোটেও ভালো নয়। এক্ষেত্রে গোসলের সময় কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। এসেছে রাখতে হবে বেবি সোপ।কারণ এ ধরনের সাবানের ক্ষার এর পরিমাণ খুবই কম থাকে।শিশুদের ত্বক খুবই সেনসিটিভ হয় তাই যত কম ক্ষার ব্যবহার করা যায়। কম ক্ষারের বেবি শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। এগুলো ব্যবহার করলে শিশুর চোখ জ্বালা করবে না সঙ্গে মাথার ত্বক পরিষ্কার হবে এবং চুলও ভালো থাকে।
৩.নিয়মিত সোয়েটার পরিষ্কার করা
শীতের শরীর ঘামে না বলে শিশুদের সোয়েটার দোয়ার কথা অনেকেই ভাবেনা। কিন্তু সোয়েটারে খুব দ্রুত ধুলাবালি জমে যায়। এতে শিশুর ডাস্ট এলার্জি হতে পারে। তাই এগুলো নিয়মিত ধুয়ে দিতে হবে। আর সুয়েটার ক্ষার জাতীয় সাবান দিয়ে ধুয়া যাবে না। ওয়াশিং লিকুইড ব্যবহার করলে সোয়েটার অনেকদিন ভালো থাকে।
৪.দরজা জানলা খুলে রাখা
শীতের সময় কেন দরজা জানালা খুলে রাখার কথা বলছি? বলছি আপনার সন্তানের সুস্থতার জন্য।বদ্ধ রুমে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে না বলে ঘরে জীবাণুর সংক্রমণ বাড়তে পারে। তাই সূর্যের আলোর রুমে প্রবেশ করা পর্যন্ত দরজা জানলা কিছু সময়ের জন্য খুলে রাখুন।দুপুরের পর আবার লাগিয়ে দিন যাতে মশা প্রবেশ করতে না পারে।
৫.গরম খাবার খাওয়ান
শীতের সময় সে সুখে ঠান্ডা খাবার থেকে বিরত রাখুন। ফ্রিজে রাখা যেকোনো খাবার ভালো করে গরম করে দিতে হবে। সম্ভব হলে দিনে অন্তত একবার সু্প, গরম পানি, গরম দুধ খাওয়াতে হবে। শিশুর ঠান্ডা সমস্যা থাকলে আরাম পাবে। ভিটামিন সি যুক্ত ফল অবশ্যই খাওয়াতে হবে।
৬.ত্বকের যত্ন নেওয়া
শিশুকে রোগের হাত থেকে বাঁচাতে হলে তার পাশাপাশি শিশুর ত্বকের যত্ন নিতে।ঠোঁট ফাটা বা হাতে-পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে চুলকানির মত সমস্যা হচ্ছে কিনা সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে হবে। শিশুর ত্বক কোমর রাখার জন্য দুধ অলিভ অয়েল ও ভিটামিন ই সমৃদ্ধ প্র লোশন ব্যবহার করলে ভালো হয়।
৭.খেলাধুলা করা
অসুস্থ হয়ে যাবে এই ভেবে শীতে সবাই খেলাধুলার থেকে শিশুকে দূরে রাখে। কিন্তু এটা শিশুদের জন্য মোটেও উপকারী নয়। এই সময় খেলাধুলা কমিয়ে দিলে শরীরের ভেতর যে কোষগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় সেগুলো দুর্বল হয়ে থাকবে। তাই পর্যাপ্ত খেলাধুলা করা এই সময় অবশ্যই জরুরি।
৮.পর্যাপ্ত ঘুম
বয়স অনুযায়ী শিশুদের ঘুমের পরিমাণ বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন জন্মের পর১৪- ১৬ঘন্টা, ছয় মাস থেকে এক বছর বয়সের ১৩ থেকে ১৪ ঘন্টা, দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সে ১১ থেকে ১২ ঘন্টা,এবং ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সে ৯ থেকে সাড়ে ১০ ঘণ্টা ঘুমায়। খেয়াল রাখতে হবে বয়স অনুযায়ী শিশুরা পরিমাণ মতো ঘুমাচ্ছে কিনা।
৯.পানি পান করা
শীতে পানি পিপাসা কম পায়। তাই শিশুদেরও পানি পানে অবহেলা দেখা যায়। কিন্তু অভিভাবক হিসেবে আপনার মনে রাখতে হবে এই সময়ে শিশুর শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি প্রবেশের দরকার। তাই শিশুকে সময়মতো পানি পান করাতে ভুলবেন না।
১০.ওয়াইপসের ব্যবহার
শীতের নবজাতক শিশুদের জন্য আলাদা যত্নের প্রয়োজন হয়। শিশুর রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই পাশে বেবি ওয়াইপস রাখুন। যখনই প্রয়োজন হয় তখনই যেন ওয়াইপস দিয়ে শিশুর শরীর মুছে দেওয়া যায়। ভেজা শরীরে থাকলে বাচ্চার ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা থাকে। আর ওয়াইপস ব্যবহার করলে ব্যাকটেরিয়া নিয়ে কোন চিন্তা থাকে না। শিশুর জন্য অবশ্যই অ্যালকোহল ফ্রি ওয়াইপস বাছাই করুন।